কুকুর পালা কি জায়েজ? এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

ইসলাম মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, যা জীবনের প্রতিটি অংশকে সুন্দর ও পরিপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করে। তাই, ইসলামে কুকুর পালার বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট বিধান ও নিয়ম রয়েছে। ইসলামে কুকুর পালার বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের কুরআন ও হাদিসের আলোকেই বিষয়টি বুঝতে হবে।

কুকুর পালার অনুমতি

ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে কুকুর পালা জায়েজ। তবে এই অনুমতি কোনোভাবেই সার্বিক নয়, বরং বিশেষ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। যেমনঃ

  1. কৃষি ও শিকার: হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি কৃষিকাজ বা শিকার করার উদ্দেশ্যে কুকুর পালে, সে ব্যক্তির জন্য তা জায়েজ।” (সহিহ বুখারি)। শিকার বা কৃষিকাজের জন্য কুকুর ব্যবহার করা একটি বৈধ কাজ। বিশেষ করে প্রাচীনকালে শিকার কুকুরের সাহায্যে করা হতো। এছাড়া, কৃষিকাজে ক্ষেত ও ফসলের নিরাপত্তার জন্য কুকুর পালা অনুমোদিত।
  2. পশু রক্ষক বা নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে: ইসলামে গবাদি পশু ও ঘরের নিরাপত্তার জন্য কুকুর পালা বৈধ বলে উল্লেখ রয়েছে। কারণ, কুকুরের প্রহরায় গবাদি পশু বা সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
  3. গৃহে সাধারণত কুকুর পালার নিষেধাজ্ঞা: তবে ইসলামের অনেক ফকিহদের মতে, কোনো বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের মধ্যে কুকুর রাখা বা কুকুরকে গৃহস্থালির অংশ হিসেবে পালন করা অনুচিত। কারণ, কুকুরের মুখ বা লালা নাপাক হিসেবে গণ্য হয়, যা নামাজের জন্য অযোগ্য হতে পারে।

কুকুর পালার বিষয়ে হাদিস

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রয়োজন ছাড়া কুকুর পোষে, তার নেক আমল থেকে প্রতিদিন একটি কিরাত পরিমাণ কমে যায়।” (সহিহ বুখারি)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কুকুর পালার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা সংরক্ষিত এবং সতর্ক। কুকুর শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যে পালন করা উচিত, যেমন শিকার বা নিরাপত্তা।

কুকুরের বিষয়ে সতর্কতা

ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুকুরের লালা বা কুকুরের সংস্পর্শে এলে সেই স্থানের বা কাপড়ের পবিত্রতা নষ্ট হয় বলে উল্লেখ রয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, “যদি কোনো কুকুর তোমাদের পাত্রে মুখ দেয়, তাহলে সাতবার সেই পাত্র ধুয়ে নাও, যার মধ্যে একবার মাটির দ্বারা।” (সহিহ মুসলিম)। এই নির্দেশনা ইসলামে কুকুর পালার ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়।

কুকুর পালার নিষেধের কারণ

কুকুরের লালা বা থুতু নাপাক হওয়ার পাশাপাশি, ইসলামে কুকুরের প্রতি অতি মায়া বা ভালোবাসা পোষণ করে তাকে গৃহস্থালির অংশ হিসেবে রাখা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এটি কেবল ধর্মীয় নিয়মকানুনেই ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না, বরং শারীরিক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও সৃষ্টি করতে পারে।

ইসলামের দৃষ্টিতে কুকুরের গুরুত্ব

যদিও ইসলামে সাধারণভাবে কুকুরকে গৃহপালিত পশু হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, তবে তা কোনোভাবেই কুকুরের প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অবহেলার সমর্থন দেয় না। ইসলামে পশু-পাখির প্রতি দয়া ও সহানুভূতি দেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, “একজন নারীকে দোযখে পাঠানো হয়েছে কারণ সে একটি বিড়ালকে আটকে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। অন্যদিকে, একজন পুরুষকে বেহেশতে পাঠানো হয়েছে, কারণ সে পিপাসিত একটি কুকুরকে পানি পান করিয়ে তার জীবন বাঁচিয়েছিল।” (সহিহ বুখারি)। এ থেকে স্পষ্ট যে, কুকুর বা অন্য কোনো প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি দেখানো ইসলামে খুবই প্রশংসনীয় কাজ।

আরও পড়ুনঃ কুকুর ছানার যত্ন নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি কি?

উপসংহার

ইসলামের দৃষ্টিতে কুকুর পালা জায়েজ, তবে সেটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এবং কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে। শিকার, কৃষি বা নিরাপত্তার জন্য কুকুর পালন করা জায়েজ হলেও, গৃহস্থালির অংশ হিসেবে কুকুর পোষা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কুকুর পালার ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ধর্মীয় বিধান মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রিলেটেড প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ কুকুর পালা কি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ?

উত্তরঃ না, কুকুর পালা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়। শিকার, কৃষিকাজ বা নিরাপত্তার জন্য কুকুর পালন জায়েজ, তবে সাধারণভাবে গৃহে কুকুর রাখা নিষেধ।

প্রশ্নঃ ইসলামে কুকুরের লালা কেন নাপাক?

উত্তরঃ ইসলামে কুকুরের লালা নাপাক হিসেবে গণ্য করা হয়। যদি কুকুরের লালা কোনো পাত্রে লাগে, সেটি সাতবার ধোয়া উচিত, যার মধ্যে একবার মাটি দিয়ে।

প্রশ্নঃ কুকুরের প্রতি নিষ্ঠুরতা করার বিষয়ে ইসলামের বিধান কী?

উত্তরঃ ইসলামে কুকুর বা অন্য কোনো প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা করা কঠোরভাবে নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (সা.) দয়ার সাথে প্রাণীদের সঙ্গে আচরণ করতে উৎসাহিত করেছেন।

প্রশ্নঃ ইসলামে কোন উদ্দেশ্যে কুকুর পালন জায়েজ?

উত্তরঃ ইসলামে শিকার, কৃষিকাজ এবং নিরাপত্তার জন্য কুকুর পালন জায়েজ। তবে, সাধারণভাবে গৃহস্থালির অংশ হিসেবে কুকুর রাখা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

প্রশ্নঃ ইসলামে গৃহস্থালিতে কুকুর রাখা কেন নিরুৎসাহিত?

উত্তরঃ ইসলামে কুকুরের লালা নাপাক বলে গণ্য হয়, যা নামাজের জন্য পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে। এছাড়া, কুকুর ঘরে রাখলে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকতে পারে।

Leave a Comment