বিড়ালের বমি হওয়ার কারন ও প্রতিকার কি?

বিড়াল পোষা মানুষের কাছে এটি একটি সাধারণ সমস্যা—বিড়ালের বমি করা। যদিও এটি মাঝে মাঝে স্বাভাবিক হতে পারে, তবে ঘন ঘন বমি করা কিছু গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই, বিড়ালের বমির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ।

বমির সাধারণ কারণসমূহ

১. খাদ্যাভ্যাস ও খাবারের পরিবর্তন

বিড়াল হঠাৎ করে নতুন খাবার খেলে বা অপরিচিত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করলে বমি করতে পারে। কিছু খাবার যেমন দুধ, গ্রাস, বা তৈলাক্ত খাবার বিড়ালের পাকস্থলীর জন্য সহ্য করা কঠিন হতে পারে।

২. বহিরাগত পদার্থ গ্রহণ

বিড়ালরা অনেক সময় খেলনা, কাগজ, প্লাস্টিক ইত্যাদি জিনিস মুখে নিয়ে খেলার চেষ্টা করে। এসব অখাদ্য পদার্থ পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে তা বমির কারণ হতে পারে।

৩. পশমের বল (Hairball)

বিড়াল নিজের শরীর লেহন করার সময় অনেক পশম গিলে ফেলে। এই পশম পাকস্থলীতে জমা হয়ে গেলে তা বমির কারণ হতে পারে।

৪. অন্ত্রের সমস্যা

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলি যেমন অন্ত্রের প্রদাহ, আলসার, বা অন্ত্রের অবরোধ বিড়ালের বমি হওয়ার একটি প্রধান কারণ।

৫. সংক্রামক রোগ

ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ যেমন প্যানলিউকোপেনিয়া, ক্যালিসি ভাইরাস ইত্যাদি বমির কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ বিড়ালের চোখের রোগের লক্ষন গুলো কি কি?

৬. প্যারাসাইট

অন্ত্রের কৃমি বা অন্যান্য পরজীবী বিড়ালের বমির কারণ হতে পারে। এ ধরনের সংক্রমণ খুব সাধারণ, বিশেষ করে ছোট বিড়ালের ক্ষেত্রে।

৭. কিডনি বা লিভারের সমস্যা

কিডনি বা লিভারের সমস্যাগুলি বিড়ালের বমির সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। এই ধরনের সমস্যাগুলি সাধারণত বয়স্ক বিড়ালের ক্ষেত্রে দেখা যায়।

বিড়ালের বমির প্রতিকার

১. খাবারের নিয়ন্ত্রণ

বিড়ালের খাবারের রুটিন পরিবর্তন না করে ধীরে ধীরে নতুন খাবার যুক্ত করা উচিত। সেই সাথে, তাদের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও পুষ্টি নিশ্চিত করা উচিত।

২. পশমের বল নিয়ন্ত্রণ

নিয়মিত ব্রাশিং করলে বিড়ালের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পশম সরানো যায়। পশমের বল গঠনে সহায়ক খাবার বা ল্যাক্সাটিভের ব্যবহারও বিবেচনা করা যেতে পারে।

৩. পরিস্কার পরিবেশ

বিড়ালের খেলনার সঠিক পরিস্কার রাখা, তাদের খাদ্য এবং পানির পাত্র নিয়মিত ধোয়া, এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

৪. প্যারাসাইট নিয়ন্ত্রণ

প্যারাসাইট থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত ডিওয়ার্মিং করা উচিত। পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসাইট প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. ওষুধ প্রয়োগ

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা বা সংক্রমণ থাকলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত।

৬. বিশেষ খাবার

বিশেষ করে যাদের কিডনি বা লিভারের সমস্যা আছে তাদের জন্য বাজারে বিশেষ ধরনের খাবার পাওয়া যায়। এই ধরনের খাবার তাদের বমির সমস্যা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

বিড়ালের বমি কখন গুরুতর?

যদি বিড়ালের বমির সাথে রক্ত দেখা যায়, যদি বমি ঘন ঘন হয়, অথবা বিড়াল যদি খাবার না খায় এবং অবসাদগ্রস্ত দেখায়, তবে সাথে সাথে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বমির সাথে যদি পাতলা পায়খানা, জ্বর, বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে তা অবিলম্বে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

বিড়ালের বমি সংক্রান্ত আরও কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ বিড়াল কতক্ষণ পর পর বমি করলে তা স্বাভাবিক ধরা যেতে পারে?

উত্তরঃ মাঝে মাঝে বমি করা স্বাভাবিক হতে পারে, তবে ঘন ঘন বমি করলে তা চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

প্রশ্নঃ কীভাবে বুঝবো আমার বিড়ালের বমি গুরুতর?

উত্তরঃ যদি বমির সাথে রক্ত, অবসাদ, খাবার না খাওয়া, বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ থাকে, তবে তা গুরুতর হতে পারে।

প্রশ্নঃ পশমের বল থেকে কীভাবে বিড়ালকে মুক্ত রাখা যায়?

উত্তরঃ নিয়মিত ব্রাশিং এবং পশমের বল প্রতিরোধক খাবার ব্যবহার করে বিড়ালকে পশমের বল থেকে মুক্ত রাখা যায়।

প্রশ্নঃ কোন খাবারগুলি বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে?

উত্তরঃ দুধ, তৈলাক্ত খাবার, এবং কিছু নির্দিষ্ট সবজি যেমন পেঁয়াজ এবং রসুন বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

প্রশ্নঃ কিভাবে প্যারাসাইট থেকে বিড়ালকে রক্ষা করা যায়?

উত্তরঃ নিয়মিত ডিওয়ার্মিং এবং পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসাইট প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।

উপসংহার

বিড়ালের বমি হওয়ার কারণগুলি বেশ বৈচিত্র্যময় হতে পারে। যদিও কিছু বমি স্বাভাবিক, তবে ঘন ঘন বা গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত। বিড়ালের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং পরিষ্কার পরিবেশ বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment